হিটলার লিখেন, "আমি বুঝতে পারছি, সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। একমাত্র বোকা,
মিথ্যুক আর বিশ্বাসঘাতকেরাই শত্রুর কাছ থেকে ভাল মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার আশা
করতে পারে।"
" প্রতিটা রাত আমি নানাবিধ ভাবনায় পার করে দিই। যতই ভাবি ততই তাদের প্রতি আমার ঘৃণাবোধ বাড়তে থাকে। অথচ আমরা কি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতাম না? দেশকে যারা ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যে বেঁচে দিয়েছে তাদের ক্ষমা নেই। তারা বেজন্মা পাপী। কঠোর শাস্তিই তাদের প্রাপ্য।"
হিটলার আরও বলেন, "এসব ভাবতে গেলেই আমার চোখ জ্বালা করতে শুরু করে।(১ম বিশ্বযুদ্ধে হিটলার শত্রুর গ্যাস আক্রমণের শিকার হন। বেশ কয়েকদিন ধরে তাকে চোখ জ্বালা কষ্ট সহ্য করতে হয়)। কিন্তু এই জ্বালা আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে বন্ধ করতে পারেনি।"
আর তারপর, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন।
"আমি আমার নিয়তি নির্ধারণ করে ফেলেছি। আমি ততখানত সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি রাজনীতি শুরু করব।"
***
১৯১৮ সালে, জার্মানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সঙ্গিন। দেশের বিভিন্ন শহরে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। মিউনিখ শহরও এর ব্যতিক্রম নয়। নতুন গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হলেও, স্থানে স্থানে, বিভিন্ন সংগঠন বিপ্লব ঘটাচ্ছিল। এসব তথাকথিত বিপ্লবে, অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাদের মধ্যে, অধিকাংশ হল যুদ্ধফেরত সৈনিক। দীর্ঘ চারটা বছর যুদ্ধ করার পর, তারা এসে দেখে যে, তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু তারা পাচ্ছে না। আর এই কারনেই, ততকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেকেই বিপ্লবে অংশ নিচ্ছিলেন।
দেশে তখন ব্যাঙের ছাতার মত রাজনৈতিক দল গজিয়ে উঠছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আবার বামপন্থী মানসিকতার।
এমনই এক অস্থির সময়ে মিউনিখে অবস্থান করছিলেন হিটলার। তার কোন বন্ধু বান্ধব, চেনা জানা, কেও ছিল না। এরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকে যে রাজনীতি করা যাবে না, তাও তিনি খুব ভাল করে টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু তার কোন উপায় ছিল না।
মিউনিখের এই বেকার ও হতাশাগ্রস্ত জীবন নিয়ে তিনি লিখেন, "প্রতিটা দিন আমি শুধু চিন্তা করে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু কোন কুল কিনারা পেতাম না। কি করব, কিভাবে শুরু করব, কার সাথে যোগাযোগ করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
প্রতিবার আমি চিন্তা করতে বসি, আর প্রতিবারই আমি উপলদ্ধি করি যে আমি কতটা অসহায়। আমি আমার দেশের জন্যে কিছুই করতে পারছি না।"
***
এভাবে হতাশাপূর্ণ দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল তার। ইতিমধ্যে, পেটের দায়ে, তিনি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি যুদ্ধবন্দি ক্যাম্পে, প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে, এই চাকরি পেতে তার সুবিধাই হয়েছে এক প্রকার।
***
হিটলারের রাজনৈতিক জীবনে, প্রথম অগ্রগতি আসে, এই সেনাবাহিনীর হাত ধরেই। সেনাবাহিনীতে তখন রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ক্লাস হত। যুদ্ধবন্দি শিবিরের প্রহরী হওয়া সত্ত্বেও হিটলার সেসব ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন।
ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই মনোযোগী। এর সুফলও তিনি হাতে নাতে পেয়ে যান।
বেশ কয়েকদিন পর, তাকে একটি আর্মি রেজিমেন্টে, অনুরূপ রাজনৈতিক বিষয়াবলী নিয়ে ক্লাস নেওয়ার জন্যে, এডুকেশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সন্দেহাতীতভাবে, এটি ছিল তার রাজনৈতিক জীবনে এক বড় ধরণের অগ্রগতি।
***
এ যেন পথের ফকিরের হঠাৎ রাজা বনে যাওয়া। এ যেন একেবারে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। এডুকেশনাল অফিসার হিসেবে, যেমন, রাজনৈতিক বিভিন্ন কূটচাল সম্পর্কে জানা সহজ হল, ঠিক তেমনি, বক্তৃতা দেওয়ার পুরোনো ক্ষমতাটিকে আবার একটু ঝালাইও করে নেওয়া গেল। হিটলার ভেবেছিলেন, যুদ্ধে গ্যাস আক্রমনের কারণে তার বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এডুকেশনাল অফিসার হিসেবে তিনি তার বাগ্মিতা পরখ করে দেখতে পারলেন। তিনি খেয়াল করলেন বক্তৃতা দেওয়ার সময়, তার রেজিমেন্টের সৈনিকেরা একেবারে মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কথাগুলো গিলে।
তখনো কেও জানত না, আর কয়েক দশক পর, সম্মোহনী দৃষ্টির অধিকারী, বাগ্মি এই লোকের কথাতেই উঠবে বসবে পুরা জাতি।
***
১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরের কোন এক সকালে, এডুকেশনাল অফিসার অ্যাডলফ হিটলারের কাছে একটি চিঠি আসে। এটি পাঠানো হয়েছে আর্মির পলিটিকাল ব্রাঞ্চ থেকে। চিঠির মাধ্যমে তিনি জানতে পারলেন যে, তিনি একটি ছোট খাট রাজনৈতিক দলকে, পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর নাম "জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি"(German Workers party)। সংক্ষেপে একে ড্যাপ(DAP) বলা হত। হিটলার অতি উৎসাহের সাথে এই কাজে নেমে পড়লেন।
তিনি তখনো জানতেন না, এই দলটিকে নিয়েই তিনি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছেন।
***
কয়েকদিন অতি উৎসাহ নিয়ে তিনি পার্টির সভা পর্যবেক্ষণে গেলেন। কিন্তু পড়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। চিঠিতে বলা হয়েছিল যে, এই পার্টির মূলনীতি একটু ব্যতিক্রমী। কিন্তু তিনি দেখতে পেলেন, যে লাউ সেই কদু।
তিনি লিখেন, "এটি আহামরি কিছু নয়। উল্লেখযোগ্য কিছুই এখানে হচ্ছে না।"
তিনি আরও লিখেন, "আজকাল এক নতুন হুজুগ জেগেছে মানুষের। আজকাল কেও উন্নয়নের ব্যাপারে একটু অসন্তুষ্ট হলেই, কয়েকজন মিলে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলছে। এই পার্টির কথাই ধরা যাক। বিয়ার হলে ২০-২৫ জন মানুষ রাজনৈতিক তর্ক বিতর্ক করছেন, কিন্তু কোন সমাধানে পৌঁছুতে পারছেন না। এদের থেকে আর কিই বা আশা করা যায়?"
***
একদিনের ঘটনা। হিটলার ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় হেরে গিয়ে, পার্টির সভা ত্যাগ করে বেরিয়ে আসছিলেন। সভায় তখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ প্রফেসর। তিনি তার বক্তৃতায়, এক অতি বিতর্কিত এবং প্রায় দেশদ্রোহীমূলক কথার অবতারনা করেন। তার কথায় ভারসাই চুক্তির প্রতি সমর্থনের ব্যাপারটা বুঝা যাচ্ছিল। হিটলার তা স্পষ্ট শুনতে পান। ততখানত তিনি ভিতরে ঢুকে যান এবং মঞ্চে উঠে এর প্রতিবাদ করেন।
এর পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে যায়।
হিটলার এমন তীব্র ভাষায় বৃদ্ধকে আক্রমণ করেন যে, বৃদ্ধ তার কথাগুলো ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন এবং হিটলারের কথা শেষ হবার আগেই সভাস্থল ত্যাগ করেন।
নিজের বক্তৃতা শেষ হবার পর, অতি উত্তেজিত হিটলার যা বলে উঠেন, বাংলায় সারমর্ম করলে তা দাড়ায়, "যাক, প্রফেসরকে ধুয়ে দিলাম।"
পুরো সভাস্থলে এতক্ষন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল। কিছুক্ষণ পর পার্টির সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন রোগা ব্যক্তি উঠে এসে হিটলারকে বললেন, "আমি অ্যান্টন ড্রেক্সলার(Anton Drexler), এই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। আমি চাই আপনি আমাদের পার্টিতে জয়েন করেন। আমরা এক মহান ব্রত নিয়ে নেমেছি এবং এই সংগ্রামের পথে আপনার মত লোকের খুব প্রয়োজন।" এই বলে তিনি হিটলারের হাতে পার্টির একটি পুস্তিকা ধরিয়ে দিলেন। "আশা করি আপনার সাথে খুব শীঘ্রই দেখা হবে অ্যাডলফ হিটলার।"
" প্রতিটা রাত আমি নানাবিধ ভাবনায় পার করে দিই। যতই ভাবি ততই তাদের প্রতি আমার ঘৃণাবোধ বাড়তে থাকে। অথচ আমরা কি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতাম না? দেশকে যারা ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যে বেঁচে দিয়েছে তাদের ক্ষমা নেই। তারা বেজন্মা পাপী। কঠোর শাস্তিই তাদের প্রাপ্য।"
হিটলার আরও বলেন, "এসব ভাবতে গেলেই আমার চোখ জ্বালা করতে শুরু করে।(১ম বিশ্বযুদ্ধে হিটলার শত্রুর গ্যাস আক্রমণের শিকার হন। বেশ কয়েকদিন ধরে তাকে চোখ জ্বালা কষ্ট সহ্য করতে হয়)। কিন্তু এই জ্বালা আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে বন্ধ করতে পারেনি।"
আর তারপর, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন।
"আমি আমার নিয়তি নির্ধারণ করে ফেলেছি। আমি ততখানত সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি রাজনীতি শুরু করব।"
***
১৯১৮ সালে, জার্মানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সঙ্গিন। দেশের বিভিন্ন শহরে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। মিউনিখ শহরও এর ব্যতিক্রম নয়। নতুন গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হলেও, স্থানে স্থানে, বিভিন্ন সংগঠন বিপ্লব ঘটাচ্ছিল। এসব তথাকথিত বিপ্লবে, অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাদের মধ্যে, অধিকাংশ হল যুদ্ধফেরত সৈনিক। দীর্ঘ চারটা বছর যুদ্ধ করার পর, তারা এসে দেখে যে, তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু তারা পাচ্ছে না। আর এই কারনেই, ততকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেকেই বিপ্লবে অংশ নিচ্ছিলেন।
দেশে তখন ব্যাঙের ছাতার মত রাজনৈতিক দল গজিয়ে উঠছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আবার বামপন্থী মানসিকতার।
এমনই এক অস্থির সময়ে মিউনিখে অবস্থান করছিলেন হিটলার। তার কোন বন্ধু বান্ধব, চেনা জানা, কেও ছিল না। এরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকে যে রাজনীতি করা যাবে না, তাও তিনি খুব ভাল করে টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু তার কোন উপায় ছিল না।
মিউনিখের এই বেকার ও হতাশাগ্রস্ত জীবন নিয়ে তিনি লিখেন, "প্রতিটা দিন আমি শুধু চিন্তা করে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু কোন কুল কিনারা পেতাম না। কি করব, কিভাবে শুরু করব, কার সাথে যোগাযোগ করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
প্রতিবার আমি চিন্তা করতে বসি, আর প্রতিবারই আমি উপলদ্ধি করি যে আমি কতটা অসহায়। আমি আমার দেশের জন্যে কিছুই করতে পারছি না।"
***
এভাবে হতাশাপূর্ণ দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল তার। ইতিমধ্যে, পেটের দায়ে, তিনি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি যুদ্ধবন্দি ক্যাম্পে, প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে, এই চাকরি পেতে তার সুবিধাই হয়েছে এক প্রকার।
***
হিটলারের রাজনৈতিক জীবনে, প্রথম অগ্রগতি আসে, এই সেনাবাহিনীর হাত ধরেই। সেনাবাহিনীতে তখন রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ক্লাস হত। যুদ্ধবন্দি শিবিরের প্রহরী হওয়া সত্ত্বেও হিটলার সেসব ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন।
ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন খুবই মনোযোগী। এর সুফলও তিনি হাতে নাতে পেয়ে যান।
বেশ কয়েকদিন পর, তাকে একটি আর্মি রেজিমেন্টে, অনুরূপ রাজনৈতিক বিষয়াবলী নিয়ে ক্লাস নেওয়ার জন্যে, এডুকেশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সন্দেহাতীতভাবে, এটি ছিল তার রাজনৈতিক জীবনে এক বড় ধরণের অগ্রগতি।
***
এ যেন পথের ফকিরের হঠাৎ রাজা বনে যাওয়া। এ যেন একেবারে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। এডুকেশনাল অফিসার হিসেবে, যেমন, রাজনৈতিক বিভিন্ন কূটচাল সম্পর্কে জানা সহজ হল, ঠিক তেমনি, বক্তৃতা দেওয়ার পুরোনো ক্ষমতাটিকে আবার একটু ঝালাইও করে নেওয়া গেল। হিটলার ভেবেছিলেন, যুদ্ধে গ্যাস আক্রমনের কারণে তার বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এডুকেশনাল অফিসার হিসেবে তিনি তার বাগ্মিতা পরখ করে দেখতে পারলেন। তিনি খেয়াল করলেন বক্তৃতা দেওয়ার সময়, তার রেজিমেন্টের সৈনিকেরা একেবারে মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কথাগুলো গিলে।
তখনো কেও জানত না, আর কয়েক দশক পর, সম্মোহনী দৃষ্টির অধিকারী, বাগ্মি এই লোকের কথাতেই উঠবে বসবে পুরা জাতি।
***
১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরের কোন এক সকালে, এডুকেশনাল অফিসার অ্যাডলফ হিটলারের কাছে একটি চিঠি আসে। এটি পাঠানো হয়েছে আর্মির পলিটিকাল ব্রাঞ্চ থেকে। চিঠির মাধ্যমে তিনি জানতে পারলেন যে, তিনি একটি ছোট খাট রাজনৈতিক দলকে, পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর নাম "জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি"(German Workers party)। সংক্ষেপে একে ড্যাপ(DAP) বলা হত। হিটলার অতি উৎসাহের সাথে এই কাজে নেমে পড়লেন।
তিনি তখনো জানতেন না, এই দলটিকে নিয়েই তিনি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছেন।
***
কয়েকদিন অতি উৎসাহ নিয়ে তিনি পার্টির সভা পর্যবেক্ষণে গেলেন। কিন্তু পড়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। চিঠিতে বলা হয়েছিল যে, এই পার্টির মূলনীতি একটু ব্যতিক্রমী। কিন্তু তিনি দেখতে পেলেন, যে লাউ সেই কদু।
তিনি লিখেন, "এটি আহামরি কিছু নয়। উল্লেখযোগ্য কিছুই এখানে হচ্ছে না।"
তিনি আরও লিখেন, "আজকাল এক নতুন হুজুগ জেগেছে মানুষের। আজকাল কেও উন্নয়নের ব্যাপারে একটু অসন্তুষ্ট হলেই, কয়েকজন মিলে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলছে। এই পার্টির কথাই ধরা যাক। বিয়ার হলে ২০-২৫ জন মানুষ রাজনৈতিক তর্ক বিতর্ক করছেন, কিন্তু কোন সমাধানে পৌঁছুতে পারছেন না। এদের থেকে আর কিই বা আশা করা যায়?"
***
একদিনের ঘটনা। হিটলার ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় হেরে গিয়ে, পার্টির সভা ত্যাগ করে বেরিয়ে আসছিলেন। সভায় তখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ প্রফেসর। তিনি তার বক্তৃতায়, এক অতি বিতর্কিত এবং প্রায় দেশদ্রোহীমূলক কথার অবতারনা করেন। তার কথায় ভারসাই চুক্তির প্রতি সমর্থনের ব্যাপারটা বুঝা যাচ্ছিল। হিটলার তা স্পষ্ট শুনতে পান। ততখানত তিনি ভিতরে ঢুকে যান এবং মঞ্চে উঠে এর প্রতিবাদ করেন।
এর পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে যায়।
হিটলার এমন তীব্র ভাষায় বৃদ্ধকে আক্রমণ করেন যে, বৃদ্ধ তার কথাগুলো ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন এবং হিটলারের কথা শেষ হবার আগেই সভাস্থল ত্যাগ করেন।
নিজের বক্তৃতা শেষ হবার পর, অতি উত্তেজিত হিটলার যা বলে উঠেন, বাংলায় সারমর্ম করলে তা দাড়ায়, "যাক, প্রফেসরকে ধুয়ে দিলাম।"
পুরো সভাস্থলে এতক্ষন পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছিল। কিছুক্ষণ পর পার্টির সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন রোগা ব্যক্তি উঠে এসে হিটলারকে বললেন, "আমি অ্যান্টন ড্রেক্সলার(Anton Drexler), এই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। আমি চাই আপনি আমাদের পার্টিতে জয়েন করেন। আমরা এক মহান ব্রত নিয়ে নেমেছি এবং এই সংগ্রামের পথে আপনার মত লোকের খুব প্রয়োজন।" এই বলে তিনি হিটলারের হাতে পার্টির একটি পুস্তিকা ধরিয়ে দিলেন। "আশা করি আপনার সাথে খুব শীঘ্রই দেখা হবে অ্যাডলফ হিটলার।"